মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, ক্রাইম রিপোর্টার :
ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর অন্তত ১৫ স্থানে ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে।
এছাড়া বিভিন্ন স্থানে অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকা দিয়ে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
আকস্মিক এই বন্যায় সিলেট-তামাবিল (জাফলং) মহাসড়ক দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার বাংলা বাজার, রংপানি ও বিরাইমারা এলকায় সিলেট তামাবিল মহাসড়কের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি গতকাল থেকেই ছিল বিপৎসীমার ওপরে। বুধবার (২৯ মে) দিবাগত রাত থেকে আকস্মিকভাবে ভারতের মেঘালয় থেকে ঢল নামতে শুরু করে।
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অন্তত ৪-৫টি স্থানে কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তাছাড়াও অন্তত এক কিলোমিটার এলাকায় নদী উপচে পানি প্রবেশ করছে। ওই উপজেলার সুরমা নদীর বেড়িবাঁধগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পানিবন্দি হয়েছেন অন্তত তিন লক্ষাধিক মানুষ। বন্যায় গোয়াইনঘাটে ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ২৫০টির বেশি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কসহ এই চার উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক। এতে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন সড়কে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, কুশিয়ারা নদীর অন্তত ১৫ স্থানে নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ (ডাইক) ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের টিম কাজ করছে। কিন্তু প্রবল স্রোতের কারণে ভাঙা ডাইক মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, সুরমায় এখন পর্যন্ত কোথাও ভাঙনের খবর পাওয়া যায়নি। তবে সুরমা নদীরও বিভিন্ন স্থানে নদী উপচে পানি প্রবেশ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপরে, কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং গোয়াইনঘাট উপজেলায় সারিগোয়াইন নদী ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে বৃষ্টিপাত ও ভারতের বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলেই সিলেটের নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, বন্যায় উপজেলার ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দ্বি হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলার ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ২৫০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক মানুষ পার্শ্ববর্তী উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপজেলার সকল পর্যটন স্পট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, জেলা ও উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এরইমধ্যে বৈঠক করেছে। দ্রুত উদ্ধার অভিযান চলছে। সেনাবাহিনীও এরইমধ্যে রেকি করে গেছে। প্রয়োজনে তারাও উদ্ধারাভিযান ও ত্রাণ বিতরণে যোগ দেবে।
Leave a Reply